
চড়ক শেষে, রাত ফুরোলেই বাংলা ক্যালেন্ডারের পাতায় শুরু নতুন বছর ... পাওয়া-না-পাওয়ার দ্বন্দ্ব ভুলে মাতোয়ারা হয়ে উঠুক মন ...
Share
বীডন স্ট্রীটের ছাতুবাবুর বাজারে লোকে লোকারণ্য। চৈত্র বিকেলের শেষে শুরু হয়ে গেছে ব্রতপালনকারী সন্ন্যাসীদের কাটা ঝাঁপ, বটী ঝাঁপ, বাণফোড়া, তারপর চড়ক গাছের বন বন ঘূর্ণি। দর্শনার্থীদের উৎসাহ আর কৌতূহলের শেষ নেই। ভিড় ক্রমেই বাড়ছে—ছাতুবাবুর বাজার চত্বর জুড়ে বসে গেছে চৈত্রসংক্রান্তির গাজনের মেলা। সন্ন্যাসীদের মাসব্যাপী কঠোর ব্রত উদযাপনের আজ অবসান। গ্রামে গঞ্জেও একই দৃশ্যের অবতারণা। বাতাসে মিলিয়ে যাবে ভরাট কন্ঠের ডাক—“বাবা ভোলানাথের চরণে সেবা লাগে … ম… হা… দে… ব।” বহুরূপী গ্রাম থেকে আসা হরপার্বতীরাও যারা শহরের রাজপথ থেকে গলিপথে ঘুরে বেড়াত, ছেলের দল ছুটত তাঁদের পিছু পিছু— সে দৃশ্যও মুছে যাবে চৈত্র অবসানে।
রাত ফুরোলেই বাংলা ক্যালেন্ডারের পাতায় শুরু হয়ে যাবে আরেকটি নতুন বছর। শুরু হয়ে যাবে ঘরে ঘরে নতুন বছরের পঞ্জিকা দেখে দিনের শুভ মুহূর্তগুলোর হিসেব মিলিয়ে পালন করা। সমাজের সর্বস্তরের মানুষজনের মধ্যে জেগে উঠবে এক আনন্দের জোয়ার। পাওয়া-না-পাওয়ার দ্বন্দ্ব ভুলে মাতোয়ারা হয়ে উঠবে মন।
পুণ্যলোভাতুরেরা পুবাকাশে সূর্যোদয় মুহূর্তে তিনডুবে গঙ্গাস্নান সেরে বাড়ি ফিরে নতুন দিনের শুচিবস্ত্রে গৃহদেবতার পূজার্চনা করে দীপ-ধুনো দিয়ে। বাতাসে ঘুরে বেড়ায় ধুনোর গন্ধ। একটু বেলা বাড়তেই বাড়ির ছেলেপুলের দল গৃহসজ্জায় মেতে ওঠে নান্দনিক আলপনায়। নিকটবর্তী পল্লি বা পাড়ার মন্দির থেকে ভেসে আসে মাঙ্গলিক কাংস্য ও ঘণ্টার ধ্বনি, সেই সাথে ধ্বনিত হয় শঙ্খনাদ …
ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ও নতুন বছরের শুভ মুহূর্তে কালীঘাটে অথবা দক্ষিণেশ্বরের কিংবা তার নিকটবর্তী দেবতার থানে মায়ের চরণে লাল কাপড়ের মোড়ক খুলে সিদ্ধিদাতা গণেশের ছাপ আর নতুন ধানের শীষ দিয়ে সম্বসৎরের হিসেব খাতার পুজো সারে। কোথাও কোথাও প্রসাদী মিষ্টি বিতরণ করে কেউ কেউ। গহনার দোকান থেকে মুদিখানা সর্বত্রই পয়লা বৈশাখের আনন্দের ঢেউ … কেউ কেউ পরিচিতদের সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবিতে নিমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়েও আমন্ত্রণ জানান—নিমন্ত্রণ রক্ষায় আসে নিত্য থেকে নৈমিত্তিক ক্রেতার দল। আগাম টাকা দেওয়া ও নেওয়া হয়—নামও লেখা থাকে। কেউ কেউ বিগত বছরের দোকানির পাওনা টাকাও মিটিয়ে দেয়। তারপর চলে যে যার সাধ্য অনুযায়ী ক্রেতা সাধারণের জন্য মনপসন্দ ভোজনের আপ্যায়ন পর্ব।
বইপাড়ার পয়লা বৈশাখ একটা ভিন্ন মাত্রা পায়। নামজাদা প্রকাশকের ঘর আলো করে বিকেল থেকে সন্ধ্যারাত পর্যন্ত সাহিত্যিক কবিদের আনাগোনা … কোন কোন প্রকাশক প্রকাশও করেন তাদের প্রিয় লেখকদের একটি দু-টি বই—যা দিয়ে বছরের প্রকাশনার জয়যাত্রার সূত্রপাত। ধর্মীয় গ্রন্থই সাধারণত প্রাধান্য লাভ করে বছরের শুভ সূচনায় … যদিও দেবদেবীদের গ্রন্থসমূহ চিরকালীন আবেদনের সেরা … সেই ভাবনা থেকেই শিশু সাহিত্য সংসদ ও সাহিত্য সংসদ তার প্রিয় পাঠক সমাজের জন্য বছরের শুরুতেই সাজিয়ে দিল পুরাণ থেকে শুরু করে দেবদেবীদের জীবন কাহিনি—যা পাঠে একই সঙ্গে আনন্দ, মজার ও জানার ত্রিবেণীতীর্থ পরিক্রমা হবে।
গল্পে গল্পে উপনিষদ-পুরাণ
ভারতবর্ষ বেদ পুরাণের দেশ। পৌরাণিক যুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আমরা বড়োই হই উপনিষদ ও পৌরাণিক সাহিত্যে বর্ণিত নীতি আদর্শ ও শিক্ষা নিয়ে। আর তাই আমাদের চিন্তায় ও চিন্তনে এদের প্রভাব সর্ববিরাজমান। সেই থেকেই আমাদের ওপর বেদ পুরাণ উপনিষদের মতো প্রাচীন সাহিত্য সম্বন্ধে ছোটোদের কৌতূহলী করে তোলার দায়ভার খুব স্বাভাবিকভাবেই বর্তায়।
আজ এই বচ্ছরকার দিনে ছোটোদের সাথে সহজ ও সাধারণ গল্পের মধ্যে দিয়ে ছোটো ছোটো মূল্যবোধ ও পারস্পরিক বিশ্বাসের পরিচয় করানো হোক আমাদের উদ্দেশ্য।
গণেশ-কার্তিক-চণ্ডী—তিন দিয়ে হোক হাতেখড়ি
অন্যদিকে বিভিন্ন ঠাকুর দেবতা দেখে ছোটোদের মনে জাগে নানা প্রশ্ন। যেমন গণেশ ঠাকুরের হাতির মাথা কেন? দূর্গার কেন দশ হাত, কেনইবা বধ করেন মহিষাসুরকে? গণেশের বউ আছে, কার্তিকের বউ কোথায়? খেয়াল করে দেখলে দেখা যাবে আমরা সময়ের অভাবে সব সময় তাদের সমস্ত কৌতূহল মেটাতে সক্ষম হই না। সহজ উপায় তাদের হাতে সেই বই তুলে দেওয়া যেগুলো এই উত্তরগুলো দেবে। গণেশ, কার্তিক ও চণ্ডীর গল্পগুলি এই ভাবনা থেকেই ছোটোদের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে—যেগুলো পড়লে অনেক কঠিন জিনিসও সহজ করে ধরা দেবে ছোটোদের কাছে।